ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় খাদ্যের খোঁজে ৩ বন্যহাতি লোকালয়ে, ব্যাপক সবজি ক্ষেত নষ্ট, জনমনে আতঙ্ক

এম.মনছুর আলম, চকরিয়া ::  কক্সবাজারের চকরিয়ায় ব্যাপক হারে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বৃক্ষ নিধন, পাহাড় সাবাড় করে অভয়ারণ্য ধ্বংস ছাড়াও হাজার হাজার একর বনভূমি দখল করে বসতি স্থাপনের কারণে দিন দিন আবাস হারাচ্ছে বন্যহাতির দল। এতে বন্যহাতি আবাসস্থল হারানোর পাশাপাশি চরম খাদ্য সংকটে পড়ে। এই অবস্থায় খাবারের সন্ধানে প্রতিনিয়ত লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বন্যহাতি৷

১৫ মার্চ (রবিবার) সকাল থেকে উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের পুরিত্যাখালী এলাকায় লোকালয়ে তিনটি বন্যহাতি ঢুকে সবজি ক্ষেতে ব্যাপক তাণ্ডব চালালে আতঙ্কে খামার ছেড়ে পালায় কৃষকরা। এতে কৃষকের প্রচুর পরিমাণ সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। দক্ষিণ বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী বনরেঞ্জ থেকে প্রায় ২০কিলোমিটার অদূরে ইউনিয়নের কোনাখালী পুরিত্যাখালী বিলে বাগগুজারা রাবার ড্যাম সংলগ্ন এলাকায় হানা দেয় এ বন্যহাতি। লোকালয়ে বন্যহাতি দেখে স্থানীয়দের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

ঘটনা সংবাদ  পেয়ে সাফারী পার্কের কর্মচারী, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, চৌকিদার, মাতামুহুরি ও হারবাং ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা সকাল থেকে বন্যহাতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে সর্বশেষ বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ওই হাতি তাড়িয়ে নিরাপদে বনাঞ্চলের ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়। সকাল থেকে কয়েক হাজার উৎসুক কৃষক-জনতা এক নজরে এ তিনটি হাতি দেখার জন্য ভিড় জমায়।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, রবিবার সকালের দিকে পুরিত্যাখালীর বিলে প্রতিদিনের মতো সবজি ক্ষেতে টমেটো ও মরিচ তুলতে যায় নারী-পুরুষ বেশ কয়েকজন কৃষক। সবজি তোলার সময় হঠাৎ নজরে আসে তিনটি বন্যহাতি। হাতি তিনটা সবজি ক্ষেতের ঘেরাবেড়া ভেঙে চষে বেড়াচ্ছে আর নষ্ট করছে। এসময় ৭-৮ জন কৃষকের সবজি ক্ষেতের টমেটো, মরিচ ও ধান ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে দিয়েছে এ বন্যহাতি। এতে কৃষকের প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে বলে জানায়। ক্ষেতে কৃষকদের দেখে হাতি হুঙ্কার ছাড়লে ক্ষেতের কৃষকরা খামার ছেড়ে পালিয়ে যায়। লোকালয়ে হাতি আসার ঘটনা আশপাশের এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক শত শত উৎসুক জনতা ভিড় জমায় ওই হাতি দেখতে।

খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মচারী, চৌকিদার ও পুলিশ এ বন্যহাতি গুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টায় অব্যাহত রেখে সর্বশেষ বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ওই হাতি তাড়িয়ে বনাঞ্চলে ঢুকিয়ে দেয়া হয় ।

সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দপ্তরের পরিসংখ্যান মতে, গত দুই বছরে চকরিয়া ও লামা উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি ১০টি ইউনিয়নের অন্তত অর্ধশতাধিক শিশু, নারী-পুরুষ প্রাণ হারিয়েছেন এ বন্যহাতির আক্রমণে। এর মধ্যে কেউ বাসিন্দা, কেউবা কৃষক ও পাহারাদার। এছাড়াও রয়েছেন কাঠুরিয়াসহ বিভিন্ন শ্রমজীবী নারী-পুরুষ। আবার পরিবেশ ধ্বংস করে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ইটভাটার কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত এক বছরে চকরিয়া ও লামায় মারা পড়েছে অন্তত ৭টি বন্যহাতি। বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন ও বন উজাড়ের কারণে পাহাড়ে চরম খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া বন উজাড়ের পর হাজার হাজার একর বনভূমি দখলে নিয়ে বনের ভেতর অবৈধ বসতি গড়ে ওঠার কারণেই এ বন্যহাতি বনাঞ্চল ছেড়ে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। বিকালের দিকে বন বিভাগের কর্মীরা এ হাতি তিনটি নিরাপদে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।

ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারী পার্কের বন কর্মকর্তা মাজহার হোসেন বলেন, দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা ধরে হাতি তিনটি ক্ষেতের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। খবর পেয়ে পার্ক থেকে মাউথসহ নয়জন লোক নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।

তিনি বলেন, প্রথমে আশপাশের লোকজন সরিয়ে দেয়া হয়। পরে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে হাতি গুলোকে মাতামুহুরি নদী পার করে তাদেরকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে সক্ষম হই।

পাঠকের মতামত: